হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৭তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জ ও ঢাকায় এই জনপ্রতিনিধিকে স্মরণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর বনানীতে কবর জিয়ারত ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কিবরিয়া স্মৃতি সংসদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

গ্রেনেড হামলার ১৭ বছরেও এ মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে নিহতদের পরিবারসহ জেলাবাসীর মধ্যে। ‘মামলার বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা একেবারেই আশা রাখছি না’ বলেছেন ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী আওয়ামী লীগের এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে শাহ এএমএস কিবরিয়া গ্রেনেড হামলার শিকার হন। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই হামলায় তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন ৭০ জন। ঘটনার পরদিন হত্যা মামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়।

পরে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ প্রথম দফায় শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মজিদ খান। ২০০৭ সালে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর ২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই বছরের ২৮ জুন শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া এই অভিযোগপত্রের ওপরও নারাজি আবেদন করেন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর সিআইডি সিলেট রেঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন নেছা পারুল সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গউছসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মিজানুর রহমান মিটু, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমদ আরিফ প্রকাশ নিমু, বদরুল আলম মিজান, মাওলানা শেখ ফরিদ আহমদ, আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মঈন উদ্দিন শেখ, মুহিবুল্লাহ ওরফে মুজিবুর রহমান প্রকাশ অভি ও মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম।

এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গউছসহ ১২ জন জামিনে রয়েছেন। মামলায় ১৭ বছরে ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, মামলার বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা একেবারেই আশা রাখছি না। এ ধরনের একটা মামলা ইফেক্টিভ তদন্ত ছাড়া ভুল তদন্তে বিচার আশা করা যায় না। তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

মামলায় অধিক সাক্ষী দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলাটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কিছু আজেবাজে লোককে জড়িত করেছে। একটি হত্যা মামলা তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে, এটাই আমার কাছে আপত্তিকর।

কলমকথা/ সাথী